IQNA

ইসরাইলি দানবের বর্বরতা থামানো বা কমানো কি সম্ভব?

22:04 - April 12, 2024
সংবাদ: 3475331
ইকনা: ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে ইহুদিবাদীদের অগণিত অপরাধ। বেশিরভাগ সরকারগুলো নির্বিকার। ইসরাইলি যুদ্ধ-অপরাধের মুখে আন্তর্জাতিক ও বৈশ্বিক সংস্থাগুলো নিষ্ক্রিয়, হতবাক।

ইসরাইলি দানবের বর্বরতা থামানো বা কমানো কি সম্ভব?ফলে বাড়ছে ইসরাইলের নৃশংস নিষ্ঠুরতা অধিকৃত ফিলিস্তিনে। উপনিবেশবাদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ইসরাইলের বিলুপ্তি তাই আজ সবচেয়ে বড় মানবীয় দাবি ও আন্তর্জাতিক শান্তির অনিবার্য শর্ত।

ইসরাইলের নির্বিচার বোমা হামলায় শহীদ হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনি, যাদের বেশিরভাগই হল শিশু ও নারী। নিখোঁজ সাত হাজার। এ ছাড়াও ইসরাইল গত পয়লা এপ্রিল যে বড় ধরনের যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে তা নানা দিক থেকে বিচার ও বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এই দিনে ইসরাইল জেনেভা কনভেনশন, ভিয়েনা কনভেনশন ও রোম-চুক্তিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে গাজার আশশিফা হাসপাতাল ধ্বংস করে দেয়ার কাজ সম্পন্ন করে দুই সপ্তা'র অভিযানের মাধ্যমে। ফলে পুরোপুরি অচল হয়ে গেছে এ হাসপাতাল। ধ্বংসযজ্ঞ সম্পন্ন করে হানাদার ইসরাইলি সেনারা সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। 

এই হাসপাতাল যে কেবলই রোগী ও আহতদের চিকিৎসার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছিল  তা নয় ইসরাইলি হামলায় ঘরবাড়ী-হারা হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থীর জন্যও তা ছিল এক নিরাপদ আশ্রয়-স্থল। 

ইসরাইলি সেনারা চলে যাওয়ার পর এই হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরের চত্বরে পাওয়া গেছে কয়েক ডজন লাশ যাদের হাত ও পা বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং তাদের শরীরে ছিল নির্যাতনের চিহ্ন। লাশের নানা অংশ ও অঙ্গ ছিল ছিন্ন-ভিন্ন আর পিশে-যাওয়া। যা করা হয়েছিল বিস্ফোরণের মাধ্যমে অথবা ইসরাইলি ট্যাংকের মাধ্যমে। নানা ভিডিওতে দেখা গেছে রোগীদের বন্দি করে রাখা হয় কোনো যত্ন ও খাদ্য দেয়া ছাড়াই। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হাসপাতালে থাকা রোগী, বেসামরিক নাগরিক, মেডিক্যাল কর্মী, সাংবাদিক ও শরণার্থীদের ওপর হামলা এসবই চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন (১৯৪৯) এবং এর ১৮ ও ১৯ নম্বর ধারার এবং ১৯৭৭ সনের বর্ধিত প্রটোকলেরও লঙ্ঘন।


ওই ঘটনার সামান্য কিছুকাল পরেই ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে শহীদ হন ইরানি ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সাত জন সদস্য যাদের মধ্যে ছিলেন জেনারেল মোহাম্মাদ রেজা জাহেদি এবং সিনিয়র সামরিক উপদেষ্টা হাদি হাজি রাহিমি। এ ছাড়াও সিরিয়া ও লেবাননের কয়েকজন নাগরিকও এই হামলায় শহীদ হন। 

এ হামলা যে কেবল সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন তা নয় একইসঙ্গে তা একটি কূটনৈতিক অবস্থানেরও ওপর হামলার মত বেআইনি ঘটনা। আসলে ইসরাইল গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে সিরিয়া, লেবানন ও ইরানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে যুদ্ধের পরিধি বিস্তারের চেষ্টা করছে। সিরিয়ায় ওই হামলাও ভিয়েনা কনভেনশনের ৩১ নম্বর ধারার লঙ্ঘন। এ ধারায় বলা হয়েছে  কূটনৈতিক অঙ্গন বা কনস্যুলার কেন্দ্রগুলোর ক্ষতি বা অসম্মান করা যাবে না (২৪ এপ্রিল,১৯৬৩)। এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানো হলে তা অনেক ধরনের ভয়াবহ ক্ষতি বা ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনবে। 

অন্যদিকে ইসরাইল সম্প্রতি বিশ্বের কেন্দ্রীয় রান্নাঘর নামক ত্রাণ-সংস্থার ৭ জন কর্মীকে হত্যা করেছে বিমান হামলা চালিয়ে। অথচ ওই সংস্থা তাদের তৎপরতা ও গাড়ির গতিপথ সম্পর্কে ইসরাইলের সশস্ত্র বিভাগকে নিয়মিত তথ্য দিয়ে আসছিল।  ওই সংস্থার মতে ইসরাইল পরিকল্পিতভাবেই নানা গাড়ির ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। 

গাজায় মানবিক সহায়তায় জড়িত জাতিসংঘের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, "গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলে ২০০ জনেরও বেশি সাহায্যকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।" নিঃসন্দেহে ভয় দেখিয়ে এ ধরনের ত্রাণ তৎপরতা বন্ধ করা, ফিলিস্তিনিদের অপমান করা অব্যাহত রাখা ও তাদের ওপর ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্যই এ ধরনের হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল।
এ ধরনের তৎপরতা রোম চুক্তির বি অনুচ্ছেদের ৮ নম্বর ধারার ও যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের রীতি সংক্রান্ত অন্যান্য অনেক আইনেরও লঙ্ঘন।  

একইদিনে ইহুদিবাদী ইসরাইলের কথিত সংসদ পাস করেছে আল-জাজিরা সংক্রান্ত বিল। নেতানিয়াহুর উত্থাপিত ওই বিলে ইসরাইলে আলজাজিরা সংবাদ মাধ্যমকে খুব দ্রুত নিষিদ্ধ করার ও এর তৎপরতা বন্ধ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কারণ এই সংবাদ মাধ্যমটি গাজা যুদ্ধের সংবাদ ব্যাপকভাবে তুলে ধরছে। এ ছাড়াও এই বিলের আওতায় অন্য যে কোনো বিদেশী সংবাদ মাধ্যমের তৎপরতাও বন্ধ ও নিষিদ্ধ করা যাবে। এর আগে ইসরাইলি সেনাদের হামলায় নিহত হয় আলজাজিরার দুই সাংবাদিক ও একজন ক্যামেরাম্যান। এ ছাড়াও গাজার চলমান যুদ্ধ চলাকালে ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছে ১৪৭ জন সাংবাদিক ও রিপোর্টার এবং অনেক সাংবাদিকের পরিবারের বহু সদস্য। আসলে ইসরাইল এভাবে ফিলিস্তিনে তার জাতিগত শুদ্ধি অভিযান ও গণহত্যার খবর এবং তথ্য-প্রমাণগুলোর প্রকাশ বা ফাঁস হওয়াকে আটকে রাখতে চাইছে। 


ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ সংশ্লিষ্ট আরেকটি বড় অপরাধ হল মার্কিন বাইডেন সরকার ইসরাইলের কাছে ২৫০ কোটি ডলার মূল্যের বোমা ও যুদ্ধ বিমান পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এমকে-৮৪ নামক মডেলের ১৮০০টি বোমা যেগুলোর প্রত্যেকটির ওজন ২০০০ পাউন্ড এবং ৫০০টি এমকে-৮২ মডেলের বোমা যেগুলোর প্রতিটির ওজন ৫০০ পাউন্ড। মার্কিন সরকার ইসরাইলের কাছে ৫০টি এফ-ফিফটিন এবং ত্রিশটি আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করতে মার্কিন কংগ্রেসকে চাপ দিচ্ছে। এসব বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রের মূল্য ১৮০০ কোটি ডলার।  

ইসরাইল হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র কথিত সরকার যার সেনারা রোগী ও শরণার্থীদের ওপর বোমা মেরে একটি বড় হাসপাতালকে দুই সপ্তা'র অভিযানে ধ্বংস করার পর এই কাজকে বড় রকমের সাফল্য বলে আস্ফালন করেছে এবং সেইদিন বিকালেই পাশের একটি দেশে অবস্থিত অন্য একটি দেশের  কূটনৈতিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে তিনটি দেশের বেশ কয়েক ব্যক্তিকে হতাহত করেছে যদিও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ ধরনের কেন্দ্রে হামলা চালানো নিষিদ্ধ।  অন্যদিকে সন্ধ্যার সময় ইসরাইল একটি ত্রাণ সংস্থার গাড়িতে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ড, ফিলিস্তিনি ও মার্কিন-কানাডীয় নাগরিকত্বধারী সাত ব্যক্তিকে এবং এরপর একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে নিষিদ্ধ করেছে যখন ইসরাইল তার অনেক অপরাধ এখনও ধামাচাপা দিচ্ছে এবং তার পশ্চিমা সহযোগী সরকারগুলোর কাছ থেকে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র ও যুদ্ধের হাতিয়ার পাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল সত্যিই কেনো এত সীমাহীন বর্বরতা?  #

পার্সটুডে

captcha