পবিত্র রমজান মাস মহান আল্লাহর মেহমানের মাস এবং এই মাসের হৃদয় হল লাইলাতুল ক্বদর। লাইলাতুল ক্বদর মহান আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির রাত, গুনাহ মাফের রাত এবং এই রাতে কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া পাঠ ও ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গভীর করার সুপারিশ করা হয়েছে।
লায়লাতুল কদরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ হল সূর্যোদয় পর্যন্ত জেগে থাকা।
রমজানের তৃতীয় দশকে, রাসুল (সা.) তার গৃহের বিছানা গুটিয়ে ফেলতেন এবং ইতিকাফের জন্য মসজিদে যেতেন। মদিনার মসজিদের ছাদ খেজুর পাতা দিয়ে তৈরি করা ছিল এবং বৃষ্টি আসলে মসজিদের ভিতরে বৃষ্টির পানি পড়ত। ইতিকাফের সময় বৃষ্টি আসলেও আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মসজিদ ত্যাগ করতেন না। তিনি লাইলাতুল কদরের রজনীসমূহ জাগ্রত থাকতেন।
আলেমগণ বলেন যে, এই রাতে মানুষের পরবর্তী বছর রিজিক নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ মহান আল্লাহ মানুষের জীবন, মৃত্যু, রিজক, সুখ-দুঃখ ইত্যাদি বিষয় এই রাতে নির্ধারণ করেন। তাফসিরুল মিজানে এই বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
অনুতাপ প্রকাশ এবং পাপের ক্ষমা এবং ভবিষ্যতের জন্য মহান সিদ্ধান্ত এই সমস্ত ইবাদতের মধ্যে পাওয়া যায়। এগুলো বিশেষ করে বিখ্যাত দোয়াসমূহ যেমন: দোয়া-এ ইফতিতা এবং দোয়া-এ আবু হামজায় দেখা যায়।
আমরা যদি এই রাতের জন্য একটি শিরোনাম বিবেচনা করতে চাই তবে আমাদের অবশ্যই বলতে হবে যে কদরের রাতটি আল্লাহর দিকে মানুষের ফিরে আসার রাত। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন:
إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّات
মানুষের কর্ম [মূল্য] তার নিয়তের উপর নির্ভর করে।
আর শাবে কদর মানুষের উদ্দেশ্যকে প্রভাবিত করে।
মুসলমানদের অনেক কাজ অন্যান্য মানুষের মতই, কিন্তু ইসলামী শরিয়তে এর জন্য পুরস্কার রয়েছে। খাওয়া, পান করা, কাজ করা, জ্ঞান অর্জন করা, অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করা ইত্যাদি এমনকি রমজানে মুমিনদের ঘুমানো ও শ্বাস নেওয়ার জন্য সওয়াব প্রদান করা হয়। কিন্তু কেন? কেননা এটা করা হয় আল্লাহ্র কথামত এবং আল্লাহ্র সান্নিধ্য ও ঐশী গুণাবলী অর্জনের উদ্দেশ্যে। মানুষের অভিপ্রায় শুদ্ধ করার জন্য একটি মহান সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয় যা লাইলাতুল কদরে সহজ হয়ে যায়।
এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই এই মহৎ আয়াতটি থেকে বোঝা যায় যে,
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ
শাবে কদর হাজার মাসের থেকে শ্রেষ্ঠ। সূরা কদর, আয়াত: ৩
এক হাজার মাস হল প্রায় ৮৩ বছর, যা সম্ভবত একজন মানুষের গড় আয়ুকে বোঝায়। অর্থাৎ মানুষ সারাজীবন প্রচেষ্টা করে যা অর্জন করতে পারে, তা এই এক রাতে অর্জন করতে পারবে। এই অর্জন হল বিশুদ্ধ ঐশ্বরিক অভিপ্রায় যা অতীতের পাপ ক্ষমা করার সাথে সাথে মানুষের ভবিষ্যৎ আচরণকে নির্দেশ করে এবং তাকে ধার্মিক মানুষের মধ্যে স্থান দেয়।