IQNA

শুভ বাংলা সৌর হিজরী নববর্ষ বা নতুন বঙ্গাব্দ ১৪২৯ , ১লা বৈশাখ

16:07 - April 15, 2022
সংবাদ: 3471708
তেহরান (ইকনা): গতকাল ১৪ এপ্রিল বাংলা সৌর হিজরী নববর্ষ উপলক্ষে সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও তাবরীক ( মুবারক বাদ)। ৯৯২ হিজরীর ( ১৫৫৬ খ্রীষ্টাব্দের ১০ মার্চ ) ভিত্তি করে  বাংলা সন গণনা শুরু হয়। প্রথমে এ সনের নাম ছিল ফসলি সন ( আম - ই ফসলী عام فصلی )।

গতকাল ১৪ এপ্রিল বাংলা সৌর হিজরী নববর্ষ উপলক্ষে সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও তাবরীক ( মুবারক বাদ)। ৯৯২ হিজরীর ( ১৫৫৬ খ্রীষ্টাব্দের ১০ মার্চ ) ভিত্তি করে  বাংলা সন গণনা শুরু হয়। প্রথমে এ সনের নাম ছিল ফসলি সন ( আম - ই ফসলী عام فصلی ) । পরে এর নাম হয় বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ  । যেহেতু ৯৯২ হিজরী সালকে প্ল্যাটফর্ম বা ভিত্তি ( বেস ) হিসেবে গ্রহণ করে এরপর থেকে সৌর রীতিতে বছর গণনা শুরু হয় ( এবং এখানে উল্লেখ্য যে শাহানশাহ জালালুদ্দিন মুহাম্মদ আকবরের সময় রাজকীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও পলিম্যাথ [ Polymath : বহু বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিত ] ইরানের শিরাযের অধিবাসী

ফাতহুল্লাহ শীরাযী সৌর সন এবং আরবী হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন । ) আর যেহেতু প্রতি চান্দ্র বছর সৌর বছর অপেক্ষা ১১ অথবা ১২ দিন কম হয়ে থাকে সেহেতু ৯৯২ হিজরী থেকে চলতি ( বর্তমানে জারী ) হিজরী ১৪৪৩ সাল পর্যন্ত এই ৪৫১ বছরে চান্দ্র হিজরী সালের সাথে সৌর হিজরী বঙ্গাব্দের বেশ কয়েক বছর ব্যবধান হয়ে বর্তমান ১৪৪৩ হিজরী সালের ১২ রমযান মোতাবেক ১লা বৈশাখ ১৪২৯ বাংলা সৌর হিজরী সন হল । এ সন সৌর হিজরী না হলে বঙ্গাব্দ ১৪২৯ হত না বরং তা হত ১৪২৯ এর অধিক প্রায় ২০০০ অব্দের কাছাকাছি বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি ঠিক যেমনটা ভারতে প্রচলিত আছে ঠিক তেমন । তাই এই বঙ্গাব্দ আসলেই সৌর হিজরী বঙ্গাব্দ  ( বাংলা সৌর হিজরী সন )। 

ঋতু ও বছরের পরিবর্তন, নতুন ঋতু ও নতুন বছরের আগমন , ভূমি বা ভূপৃষ্ঠের মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত

হওয়া এবং গাছে নতুন পাতা , ফুল ও ফলে সজ্জিত হওয়া  ইত্যাদি হচ্ছে মহান আল্লাহর আয়াত ( নিদর্শন ) সমূহের অন্তর্গত । এ জন্য সালতামামির সময় দুআ পাঠের মাধ্যমে নতুন বর্ষ বরণের রীতি ইসলামে স্বীকৃত ও প্রচলিত রয়েছে যা দিবারাত্রি, ঋতু ও বছরের পরিবর্তন কালে অর্থাৎ সবসময় মহান স্রষ্টা ও 

পর্ওয়ার্দেগার আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের পরিচায়ক । নতুন বছর শুরু ও আগমনের মূহুর্তে নিম্নোক্ত দুআ পাঠ করা যায় :

یَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ وَ الْأَبْصَارِ

হে হৃদয় ও দৃষ্টিসমূহের পরিবর্তন কারী ! 

یَا مُدَبِّرَ اللَّیْلِ وَ النَّهَارِ

হে দিবারাত্রি পরিচালনা ও রূপান্তরকারী

یَا مُحَوِّلَ الْحَوْلِ وَ الْأَحْوَالِ

হে বছর ও অবস্থা সমূহের পরিবর্তন কারী

حَوِّلْ حَالَنَا إِلَیٰ أَحْسَنِ الْحَالِ

আমাদের অবস্থা সর্বোত্তম অবস্থায় রূপান্তরিত ও পরিবর্তিত করে দিন ।

দিন রাত, ঋতু , বছর ও সময়ের পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের অবস্থার উন্নতি হওয়া বাঞ্ছনীয়। আর তা না হলে এ পরিবর্তনে কোনো ফায়দা নেই । কারণ দিন , ঋতু , সময় ও বছরের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সবার আয়ুষ্কাল হ্রাস পাচ্ছে  । পবিত্র কুরআনের সূরা -ই ওয়াল আসরে এ বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে এরশাদ হচ্ছে : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। নিশ্চয়ই মানব জাতি ( আল - ইনসান ) ক্ষতির মধ্যেই রয়েছে ( কারণ সবার আয়ুষ্কালই হ্রাস পাচ্ছে এবং জন্মগ্রহণের পর থেকে সবাই মৃত্যু অর্থাৎ এ পার্থিব জীবনসায়াহ্নের দিকে ধাবমান ।)। তবে যারা ঈমান ( বিশ্বাস ) এনেছে , সৎ কাজ ও পূণ্য করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের হিতোপদেশ দিয়েছে কেবল তারা ব্যতীত । ( এ সব ব্যতিক্রম ধর্মী ব্যক্তি ব্যতীত গোটা মানব জাতিই ক্ষতি [ খুসর] ও ধ্বংসে পতিত ও নিমজ্জিত রয়েছে ।)

তাই সালতামামি ও নতুন বছরের আগমনে আমাদের জীবনের এক অধ্যায় ও পর্বের পরিসমাপ্তি ঘটল এবং নতুন এক অধ্যায় ও পর্বের সূচনা হল । পুরোনো বছর তার সব সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে গত হয়েছে । আসলে এ সফলতা ও ব্যর্থতা আমাদের , না সময়ের , না কালের , না বছরের । এক বছর গত 

হওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের আয়ু ও জীবনের একটা বছর কম হয়ে গেল এবং আমরা বার্ধক্য ও মৃত্যুর আরো অধিক নিকটবর্তী হলাম । তাই মহান স্রষ্টায় প্রকৃত ঈমান , সৎ কর্ম ও পূণ্য , সত্য পন্থা অবলম্বন এবং সত্য ও সরল সঠিক পথে  ধৈর্য ও দৃঢ়তা ব্যতীত শুধু নিছক বছরের পরিবর্তন ও নতুন বছরের আগমন আমাদের জন্য সুখকর তো নয় বরং তা দু:খের বার্তাই বয়ে আনে । হযরত আলী (আ) ঠিকই বলেছেন : যে দিন মহান আল্লাহর নাফরমানি করা হয় না আসলে সে দিনই হচ্ছে ( প্রকৃত ) ঈদ ও খুশীর দিন ।

کُلُّ یَوْمٍ لَا یُعْصَی اللّٰهُ فِیْهِ فَهُوَ یَوْمُ عِیْدٍ .

( নাহজুল বালাগা , সংক্ষিপ্ত জ্ঞানগর্ভ মূলক বাণী নং ৪২৮ )

আমরা পুরাতনের প্রস্থান ও নতুনের আগমন থেকে যথার্থ শিক্ষা নিয়ে আমাদের জীবনকে যেন সঠিক ভাবে বিনির্মাণ করতে পারি সেই তৌফিক কামনা করছি মহান আল্লাহর কাছে সালতামামি ও নতুন বছরের আগমনের এ লগ্নে ।

ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

২ বৈশাখ , ১৪২৯ সৌর হিজরী বঙ্গাব্দ

, ১৩ রমযানুল মুবারক ১৪৪৩ হি , ১৫ এপ্রিল ২০২২

captcha