IQNA

উম্মু মিলাল আল-সানহাজিয়্যা

উত্তর আফ্রিকার একমাত্র মুসলিম নারী শাসক

0:01 - September 18, 2022
সংবাদ: 3472483
তেহরান (ইকনা): উত্তর আফ্রিকায় মুসলিম ইতিহাসে একমাত্র নারী শাসক উম্মু মিলাল সাইয়েদা বিনতে মানসুর আল-সানহাজিয়্যা। শাসক হিসেবে যিনি ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ এবং রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা রোধ করে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে অনন্য ভূমিকা পালন করেন।

তিনি তাঁর পিতা মানসুর বিন ইউসুফ প্রতিষ্ঠিত ‘কসর আল-মানসুরিয়্যা’-তে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাসাদটি কারভিন শহর থেকে এক মাইল দূরে অবস্থিত।

 

মানসুরিয়া প্রাসাদ তার সৌন্দর্যের জন্য সমগ্র পৃথিবীতে সুনাম অর্জন করেছিল। এই প্রাসাদের কারুকাজ, তাতে ব্যবহৃত উপাদান, আয়তন ও ঐশ্বর্য, এমনকি বাগানের ফুল-ফল ও পাখি—সব কিছুই ছিল আফ্রিকানদের কাছে মহাবিস্ময়। এই প্রাসাদ নির্মাণে তাঁর পিতা মানসুর তিন লাখ স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করেছিলেন।

পিতার তত্ত্বাবধানেই তিনি লালিত-পালিত হন। তাঁর পিতা ছিলেন আলজেরিয়া থেকে মরক্কো পর্যন্ত বিস্তৃত আল-জিরিদ সাম্রাজ্যের শাসক। পিতার মৃত্যুর পর উম্মু মিলালের ভাই আবু মানাদ বাদিস বিন মানসুর জিরিদের শাসক নিযুক্ত হন। বোনের বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার কারণে তাঁকে উপদেষ্টার মর্যাদা দেন এবং রাষ্ট্রীয় কাজে তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করেন। বিশেষত পিতার মৃত্যুর পর বাদিস যেসব বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহের মুখোমুখি হন তা মোকাবেলায় তাঁকে দীর্ঘ সময় যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকতে হয়। এ সময় রাষ্ট্রের অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো উম্মু মিলাল সাইয়েদা সম্পন্ন করতেন। ৪০৫ হিজরিতে বাদিস মিসরের ফাতেমি শাসক হাকিম বি-আমরিল্লাহর কাছে যখন প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন, তখন উম্মু মিলালও হাকিম বি-আমরিল্লাহর বোন ‘সিত্তুল মুলক’-এর কাছে উপহার ও চিঠি পাঠান, যা বাদিসের কূটনৈতিক সাফল্যের পেছনে অবদান রেখেছিল। উত্তরে ‘সিত্তুল মুলক’ও উপহার ও হৃদ্যতাপূর্ণ চিঠির উত্তর পাঠান।

 

বাদিস ৪০৬ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন এবং তাঁর ছেলে আল-মুয়িজকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। কিন্তু তখন আল-মুয়িজের বয়স মাত্র ৯ বছর। ফলে জিরিদের সভাসদ ও নেতৃস্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নেন আল-মুয়িজ পরিণত বয়সে উপনীত হওয়া পর্যন্ত উম্মু মিলালই সাম্রাজ্ঞী হিসেবে শাসন করবেন।

 

উম্মু মিলাল মোট সাত বছর জিরাদ শাসন করেন এবং ১৮ অক্টোবর ১০২৩ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৫১৩ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। সংক্ষিপ্ত এই শাসনামলে তিনি অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেন। বিশেষত তিনি ছিলেন শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক। ফলে তাঁর শাসনকাল, এই সময়ের সাফল্য, তাঁর জীবনের নানা দিক ও তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে অসংখ্য কবিতা রচিত হয়েছে। তাঁর ওপর রচিত এমন শতাধিক কবিতার অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। তাঁকে প্রথমে মাহদিয়াতে দাফন করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে সানহাজায় অবস্থিত রাজকীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। কবরস্থানটিকে তাঁর নামানুসারে ‘মাকবারায়ে সাইয়েদাহ’ বলা হয়।

 

ভ্রাতুষ্পুত্র আল-মুয়িজকেই তিনি পিতার সাম্রাজ্যের জন্য গড়ে তোলেন এবং মৃত্যুর সময় তাঁর হাতে শাসনভার তুলে দিয়ে যান। সম্রাট মনোনীত হওয়ার পর আল-মুয়িজ ‘সারফুদ-দৌলা’ উপাধি ধারণ করেন। ফুফুর মৃত্যুর পর আল-মুয়িজ রাজধানীতে শোকসভার আয়োজন করেন এবং অসহায় মানুষদের আহার করান।

 

তথ্যঋণ : শাহিরাতুত তিউনিশিয়া

captcha