IQNA

‘হিজাব শুধুমাত্র কাপড়ের টুকরো নয়, এটি আমার জন্য একটি আধ্যাত্মিক আদেশ’

23:59 - September 26, 2018
সংবাদ: 2606819
আমি গত পাঁচ বছর ধরে হিজাব পরিধান করে আসছি। অনেক লোকজন আমার হিজাব পরিধান করা নিয়ে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে আর অনেকে এ সম্পর্কে তাদের নিজস্ব মতামত জানিয়েছে।

‘হিজাব শুধুমাত্র কাপড়ের টুকরো নয়, এটি আমার জন্য একটি আধ্যাত্মিক আদেশ’

 

বার্তা সংস্থা ইকনা: সম্প্রতি আমার একজন নিকটতম বন্ধু আমার হিজাব সম্পর্কে এমন একটি প্রশ্ন করেছে যাতে করে আমার মনে হয়েছে হিজাব সম্পর্কে সে খুব বেশি কিছু জানে না। আমি জানি- হিজাব সম্পর্কে আমার কমিউনিটির অন্য সদস্যদের আমার বন্ধুটি থেকেও বেশি ভুল ধারণা রয়েছে।

হিজাব সম্পর্কে অমুসলিমদের সচরাচার সাধারণ ভুল ধারণা হচ্ছে- ইসলাম নারীদেরকে হিজাব পরিধান করতে বাধ্য করে,নারীদেরকে হিজাবের মাধ্যমে দমিয়ে রাখে এবং হিজাব শুধুমাত্র নারীদেরই পরিধান করতে হবে। একজন হিজাবী মুসলিম নারী হিসেবে আমি মনে করি এসব ভুল ধারণা দূর করা আমার দায়িত্ব।

গত পাঁচ বছর যাবত আমি সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটির মুখোমুখি হয়েছি তা হচ্ছে- আমি আমার নিজের পছন্দ অনুযায়ী হিজাব পরিধান করি কিনা। মাত্র কয়েক সপ্তাহ পূর্বে আমার একজন ফেইসবুক বন্ধু দাবী করেছিল যে, ইসলাম ধর্ম নারীদেরকে জোর করে হিজাব পরিধান করায়।

তার এমন ভুল ধারণার পেছনে অবশ্য একটি কারণ রয়েছে। আর তা হলো- কিছু কিছু মুসলিম দেশ যেমন ইরান এবং সৌদি আরবের নারীদের জন্য হিজাব পরিধান বাধ্যতামূলক করে আইন করা হয়েছে আর আমার বন্ধুটি এসব দেশের কিছু গল্প শুনে মনে করেছিল যে, ইসলাম ধর্ম নারীদেরকে হিজাব পরিধান করতে বাধ্য করে।

বাস্তবিক অর্থে পবিত্র কুরআনে নারীদেরকে হিজাব পরিধান করতে বলা হয়েছে। কুরআনে নারীদেরকে বলা হয়েছে- নারীরা অবশ্যই একটি কাপড়ের টুকরোর মাধ্যমে তাদের ‘ইজ্জত আব্রু এবং মাথা ঢেকে রাখবে।’

এমনকি পবিত্র কুরআন হিজাব পরিধান না করার জন্য কোনো শাস্তির বিধান দেয়নি। তথাপি ইসলামিক দিক থেকে হিজাব পরিধান করা হচ্ছে নারীদের প্রতি একটি আধ্যাত্মিক আদেশ যা পালন করার অধিকার প্রত্যেক নারীর রয়েছে। তবে কোনো পুরুষ বা অন্য কাউকে নারীদেরকে হিজাব বাধ্য করার জন্য আদেশ দেয়া হয়নি।

হিজাব সম্পর্কে আরেকটি ভুল ধারণা হচ্ছে এটি নারীদেরকে তাদের নিজস্বতা প্রকাশে বাধা দেয়। আমি যখন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলাম তখন আমি শ্রেণীকক্ষে প্রবেশের সময় আমার হিজাব খুলে রাখতাম। সেময় আমার একজন সহপাঠী আমার কাছে জানতে চেয়েছিল- কেন আমি আমার এত সুন্দর চুল ঢেকে রাখি? আর অতি সম্প্রতি আমার একজন বন্ধু আমাকে জানিয়েছিল যে, হিজাব আমার নিজস্বতা কেড়ে নিচ্ছে।

আমি বলতে চাই,আমার হিজাব শুধুমাত্র আমার মাথা ঢেকে রাখার জন্য একটি কাপড়ের টুকরো নয়, বরং এটি আমার জন্য একটি আধ্যাত্মিক আদেশ। আমি তখন থেকে হিজাব পরিধান করা শুরু করেছি যখন আমি এর গভীর গুরুত্ব বুঝতে সক্ষম হয়েছিলাম।

যখন আমি হিজাব পরিধান করে আমার বাসা থেকে বের হই তখন আমি এর মাধ্যমে মোটেও আমার পরিচয় লুকাই না বরং আমার ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরতে সচেষ্ট হই।

আমি প্রায়ই আরেকটি প্রশ্নের মুখোমুখি হই আর তা হচ্ছে- ইসলাম ধর্মে কেন শুধু মাত্র নারীদেরকেই হিজাব পরিধান করতে বলা হয়েছে? আসলে পবিত্র কুরআন প্রথমেই বিশ্বাসী পুরুষদেরকে হিজাব পালন করার নির্দেশ দিয়েছে। পবিত্র কুরআন বিশ্বাসী পুরুষদের বলেছে- ‘বিশ্বাসী পুরুষরা যাতে তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে।’ আর এর পরেই পবিত্র কুরআন নারীদেরকে হিজাব পরিধান করার জন্য আদেশ দিয়েছে।

আবার অনেকের একটা গতানুগতিক ধারণা রয়েছে যে, ইসলাম ধর্ষণ সংস্কৃতি উৎসাহিত করেছে। কিন্তু আপনি যদি পবিত্র কুরআনের নির্দেশনার দিকে তাকান তবে আপনার ভুল ভেঙ্গে যাবে। পবিত্র কুরআন প্রথমেই পুরুষদেরকে তাদের দৃষ্টিনত করতে বলেছে। সুতরাং এখানেই এই বিতর্কের অবসান হয় যে, পুরুষদের কে তাদের দৃষ্টি সংযত করতে বলে ইসলাম নারীদেরকে সুরক্ষা দিতে চেয়েছে। যদিও ইসলামে নারীদের জন্য হিজাব করাটা বেশি প্রয়োজন তথাপি একই ভাবে এটি পুরুষদের জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

আমি আশা করি আমার এই অনুচ্ছেদটি পড়ার পরে যাদের মনে হিজাব সম্পর্কে ভুল ধারণা রয়েছে তা কিছুটা হলেও দূর হবে। একই সাথে তারা এটাও বুজতে পারবে যে,আমাকে জোর করে হিজাব পরিধান করানো হয় বা এর কারণে আমার নিজস্বতা বাঁধা প্রাপ্ত হয় না।

এর পর আপনি যখন একজন হিজাব পরিহিত নারীকে দেখবেন তখন আপনি যেন এরকম করে ভাবেন যে, এই মুসলিম নারীটি হিজাব পরিধান করেছেন তার বিশ্বাসের স্বাধীন চর্চার অংশ হিসেবে। এর সাথে আমি এটিও আশা করি যে,মুসলিম পুরুষেরা তাদের প্রতি নির্দেশিত হিজাব পালন করতে সচেষ্ট হবেন।

সূত্রঃ যুক্তরাষ্ট্রের Duluth East High Schoolএ ১১ তম গ্রেডে অধ্যয়নরত শানজ হেই নামের একজন ছাত্রীর লিখা অনুচ্ছেদ থেকে।

 

captcha