IQNA

সর্বোচ্চ নেতা;

পশ্চিমা শক্তিগুলো নেতৃত্বে রয়েছে বিখ্যাত ইহুদিবাদী ব্যবসায়ী চক্র এবং তাদের অনুগত রাজনীতিবিদেরা'

20:31 - July 27, 2022
সংবাদ: 3472190
তেহরান (ইকনা): ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী আজ সারা ইরানের জুমার নামাজের ইমামদের এক সমাবেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর প্রথম জুমার নামাজ আদায়ের বার্ষিকী উপলক্ষে তারা ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সাথে সাক্ষাত করতে আসেন।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন,  সমাজের সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রধান কেন্দ্র হতে পারে জুমার নামাজ। চিন্তাগত বিষয় থেকে সামাজিক সেবা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা থেকে শুরু করে দেশরক্ষায় জনগণকে সংগঠিত করা পর্যন্ত সব কিছুর কেন্দ্রস্থল হতে পারে এই নামাজ।
 
সর্বোচ্চ নেতা আজ আরও বলেছেন, জুমার নামাজ পুরোপুরি ব্যতিক্রমধর্মী ফরজ ইবাদত। এর সমতুল্য আর নেই। গভীরভাবে চিন্তা করলে জুমার নামাজ হজের মতো মহান ও বিশাল সমাবেশের চেয়েও ব্যতিক্রম।
 
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, পশ্চিমা সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ধর্ম ও উন্নয়নের মধ্যে বিভাজন। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান পশ্চিমাদের ২০০ থেকে ৩০০ বছরের এই দাবির অসারতা প্রমাণ করেছে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ধর্মকে সামনে রেখে ময়দানে অবতীর্ণ হয়ে উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে পাশ্চাত্য ক্ষুব্ধ হয়েছে।
 
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন, পশ্চিমা শক্তিগুলো মাফিয়া। এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছে বিখ্যাত ইহুদিবাদী ব্যবসায়ী চক্র এবং তাদের অনুগত রাজনীতিবিদেরা। আমেরিকা হচ্ছে তাদের সুকেস এবং তারা সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ২০০ বছর ধরে পাশ্চাত্য বলছে নারীরা চারিত্রিক, ধর্মীয় ও পর্দা প্রথা থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত উন্নতি করতে পারবে না এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বড় পদে যেতে পারবে না। কিন্তু ইরানি নারীরা বাস্তবে সেটাকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। ইরানের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের মধ্যে ৫০ ভাগের বেশি হচ্ছে মেয়ে। গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী বিজ্ঞানীরা ব্যাপক অবদান রেখেছেন।
 
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, সাহিত্য অঙ্গনে শীর্ষস্থানীয়দের কাতারে রয়েছেন ইরানি নারীরা। ক্রীড়াঙ্গনেও একই অবস্থা। আসলে ইরানি নারীদের যতটুকু প্রশংসা প্রাপ্য ততটুকু প্রশংসা করার ক্ষমতা মানুষের নেই। হিজাব পরিহিত ইরানি মেয়েরা বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শীর্ষ স্থান অধিকার করছে যা কোটি কোটি মানুষ টিভিতে দেখছে। এটা সাধারণ কিছু নয়।
 
তিনি বলেন, বিভিন্ন অঙ্গনে ইরানি নারীদের সাফল্য পশ্চিমাদের ৩০০ বছরের দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। স্বাভাবিকভাবেই তারা সহ্য করতে পারেনি এবং ইরানের ওপর খেপেছে। ইরানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এর মোকাবেলায় দৃঢ়তার সঙ্গে পশ্চিমাদের উপনিবেশবাদী চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি ফাঁস করতে হবে।
 
এ সাক্ষাতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করার পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ইসলামি বিপ্লবের সাফল্যের নানা দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'ইসলামি ইরান ধর্মের ছায়াতলে এসে শুধু যে নিজেকে রক্ষা করেছে তাই নয় একই সাথে ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করার জন্য পশ্চিমাদের দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টাকেও ভণ্ডুল করে দিয়েছে। ইরান এটাও প্রমাণ করেছে যে ধর্ম উন্নয়নের পথে বাধা নয়'। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন, 'পশ্চিমা শক্তিগুলো মাফিয়া। এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছে বিখ্যাত ইহুদিবাদী ব্যবসায়ী চক্র এবং তাদের অনুগত রাজনীতিবিদেরা'।
 
প্রকৃতপক্ষে, ইহুদিবাদী ইসরাইল ও আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী বৃহৎ শক্তিগুলো ধর্ম ভিত্তিক ইরানের শাসন ব্যবস্থায় খুবই অসন্তুষ্ট এবং এ কারণে তারা প্রতিনিয়ত ইরানের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। গত কয়েক শ' বছর ধরে পাশ্চাত্যবিশ্ব সরকার ব্যবস্থা থেকে ধর্মকে আলাদা করার অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ বা সেক্যুলারিজম সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে আসছে বলে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইসলামি ইরান ধর্ম ভিত্তিক জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং পাশ্চাত্যের তথাকথিত গণতন্ত্রের দাবিদাররা ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদার করার যে চেষ্টা চালিয়ে আসছে তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। 
 
ধর্মভিত্তিক জনগণের শাসন ব্যবস্থা হচ্ছে ঐশী বিধানকে সমুন্নত রেখে জনগণের পছন্দের সরকার ব্যবস্থা গঠন যেখানে ঐশী বিধান বাস্তবায়নের পাশাপাশি জনগণের আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত উন্নয়নের নিশ্চয়তা থাকবে। ধর্মভিত্তিক জনগণের শাসন ব্যবস্থা এমন একটি পদ্ধতি যেখানে জনগণ ইসলামের ঐশী নির্দেশনাবলী মেনে চলার পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনেও সক্রিয় থাকবে যা হবে দেশ পরিচালনায় সহায়ক।
 
প্রকৃতপক্ষে, পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার মোকাবেলায় ইরানের ধর্মভিত্তিক জনগণের শাসন ব্যবস্থা নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে পাশ্চাত্য বিশেষ করে আমেরিকা খুবই ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট এবং এ কারণে তারা ইরানের ইসলামি সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এ অবস্থায় জুমার নামাজের ইমামদের সমাবেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার এ সংক্রান্ত বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। 4073766
captcha